খুঁচড়া বাজারে পেঁয়াজের মূল্য ২৫০টাকা বা তার চেয়েও বেশি হওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেটের (সিআইআইডি) মাঠে নেমেছে।
এনবিআর বলছে, গত তিন মাসে দেশে প্রায় এক লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হলেও পণ্যটির দাম বেড়েই চলেছে।
এ কারণেই সরকার এনবিআরকে কারণ অনুসন্ধান করতে বলেছে জানিয়ে সংস্থাটির এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, সিআইআইডি’র কাছে এখন ৩৩২ জন আমদানিকারকের বিশদ তথ্য রয়েছে। তাদের কাছ থেকে এখন আমদানির তথ্য ও বাজারে সরবরাহের তথ্যগুলো তদন্ত করা হবে।
এনবিআরের মতে, বাংলাবান্দা, বেনাপোল, ভোমরা, হিলি, সোনা মসজিদ, টেকনাফ, চট্টগ্রাম ও ঢাকা কাস্টম হাউজ হয়ে এক লাখ ৬৭ হাজার ৮০৬.৪৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে।
‘কিন্তু পেঁয়াজের মূল্য এখনো ঊর্ধ্বমুখি রয়েছে। যার কারন অনুসন্ধানে গত ২৫ নভেম্বর থেকে আজ ২৬ নভেম্বর দুদিনে ৪৭জন পেঁয়াজ আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে,’ জানান, এনবিআর সিনিয়র কর্মকর্তা।
চলতি বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বরে যারা এক হাজার মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছে, কেবল তাদের তলব করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সিআইআইডি কর্মকর্তারা আমদানিকারকদের কাছ থেকে পেঁয়াজ বিক্রির পরিমাণ, বিক্রি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের পরিমাণ এবং যাদের কাছে পেঁয়াজগুলো বিক্রি করেছেন তাদের নাম ও ঠিকানা জানতে চাইবেন।
এনবিআরের কাছে তথ্য রয়েছে, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির লক্ষ্যে আমদানি করা পেঁয়াজগুলো অবৈধভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি পেঁয়াজ আমদানির নামে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে।
সিআইআইডির এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, কৃত্রিম সংকটের মধ্য দিয়ে যারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন, সেই সব ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন তারা। দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ ছিল, পেঁয়াজ সংকটের কোনো কারণ ছিল না বলেও জানান তিনি।
‘তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর পেঁয়াজ সংরক্ষণের কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে’ জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘অতিরিক্ত লাভের জন্য ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এ কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে।’
‘পাশাপাশি কিছু আমদানিকারক একটি বিশেষ সিন্ডিকেট গঠন করেছে, যারা গুদামগুলোতে পেঁয়াজ পঁচে গেলেও বিক্রির পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে খুঁচড়া বাজারে পেঁয়াজের মূল্যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়,’ যোগ করেন তিনি।
সিআইআইডি জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে আড়াই লাখ (২.৫২ লাখ) টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। যেখানে গত অর্থবছর (২০১৮-১৯) জুরে অর্থাৎ জুন-জুলাই পর্যন্ত আমদানিকারকরা ১১.৩৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, দেশে ২৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদার বিপরীতে দেশেই উৎপাদিত হয়েছে ২৩ লাখ মেট্রিক টন। তবে যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাবে উৎপাদনের ৩০-৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ পঁচে যায়। ফলে চাহিদা মেটাতে ৮-১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন ছিল।
এদিকে, সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীর ৫০টি এলাকাসহ সারাদেশে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে ৪৫টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে।
এর আগে, চলতি মাসের শুরুর দিকে রাজধানীর স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের কেজি ১০০-১২০ টাকা ছিল। কিন্তু ১২ নভেম্বরের পর থেকে প্রতি কেজি পেয়াঁজের মূল্য ১৬০ টাকা এবং ১৫ নভেম্বরের পর থেকে তা ২৪০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।